জল সংরক্ষণ(Water Conservation) : অক্সিজেন এবং জল ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, বুদ্ধি এবং মেধার বলে আমরা চাঁদ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছি ঠিকই। কিন্তু প্রতিনিয়ত অবুঝের মতো গাছ কেটে অক্সিজেনের ঘাটতির মাত্রা যেমন বাড়াচ্ছি, তেমনই অকারণ জলের অপচয় বাড়ার কারণে মাটির নিচে যে জলের মাত্রা ক্রমশ কমছে, তাও আমাদের গোচরে রয়েছে। তবু যে কেন জলের ঘাটতি মেটানোর কোনও প্রয়াস আমরা করছি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কারণ, পরিস্থিতি দিনে-দিনে ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। একাধিক সমীক্ষার পরে একথা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এখন থেকেই যদি জলের খরচ বাঁচানোর দিকে নজর ফেরানো না হয়, তাহলে আগামী কয়েক বছরে মারাত্মক জলের ঘটতি দেখা দেবে। তখন হাজার-হাজার টাকা খরচ করেও কিন্তু জলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। তাই তো বলি, পরের প্রজন্ম যাতে জলের কষ্টে না ভোগে, তা যদি সুনিশ্চিত করতে হয়, তা হলে এখানে বলে দেওয়া টিপস মেনে জলের অপচয় বন্ধ করুন।
বিষয় সূচী
Toggleজল সংরক্ষণের বিভিন্ন উপায়
1. মুখ ধোয়া বা দাঁত ব্রাশ করার সময় জলের ট্যাপ বন্ধ রাখুন। একান্ত যদি গরম জল পেতে ট্যাপ একটু খুলে রাখতে চান, তাহলে সেই জল ব্রাশ ধোয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারেন।
2. লকডাউন এবং করোনা পরিস্থিতি শিখিয়েছে কী ভাবে বাইরের খাবার না পেলেও সেই সব কিছু বাড়িতে বানিয়ে খাওয়া যায়। এই পরিস্থিতি শিখিয়েছে কী ভাবে বাড়িতে থাকা যায়। পাশাপাশি এই পরিস্থিতিই শিখিয়েছে কী ভাবে অভ্যাস পালটানো যায়। ফলে জল বাঁচাতেও আমাদের বেশ কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের কথা ও জল বাঁচানোর কথা মাথায় রেখে সুষম ডায়েট মেনে চলা যেতে পারে। সবজি বা মাছ-মাংসে প্রচুর জল লাগে। ফলে বেশি করে দানা শস্য খাওয়া যেতে পারে এবং যে সবজি চাষে কম জল লাগে সেই সবজি খাওয়া যেতে পারে। এসবের সঙ্গেই খাবার তৈরি করতেও নির্দিষ্ট পরিমাণ জল ব্যবহার করলে ভালো।
3. বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে শাওয়ার চালিয়ে স্নান করলে অনেক বেশি মাত্রায় জলের খরচ হয়। পরিবর্তে এক বালতি জলে স্নান সারলে কিন্তু জলের আপচয় কম মাত্রায় হয়। তাই কম পরিমাণে জল খরচ করতে যদি চান, তাহলে প্রথমেই শাওয়ার ছেড়ে বালতিতে জল নিয়ে স্নান করার অভ্যাস করুন।
4. অনেকেরই অভ্যাস থাকে প্রতি দিন অল্প অল্প করে জামাকাপড় কাচা। এতে বেশি জল খরচা হয়। কারণ প্রতিবার কয়েক লিটার জল লাগে কাচতে, ধুতে। এই সব জামা-কাপড় যদি একসঙ্গে কাচা যায়, তা হলে এই জল বাঁচতে পারে। এর জন্য ওয়াশিং মেশিনের পাশেই একটি বাস্কেট রেখে তাতে এক সপ্তাহ বা একসঙ্গে চার-পাঁচদিনের জামা কাপড় জমিয়ে কাচা যেতে পারে।
5. বৃষ্টির সময়ে ছাদের রেন পাইপের তলায় ড্রাম বসিয়ে রাখুন। পশ্চিমী দেশে এভাবে অনেকেই জল সংরক্ষণ করেন। এই জলই পরে গাছে জল দিতে বা বারান্দা, উঠোন ধোওয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে ছাদ পরিস্কার থাকা প্রয়োজন।
গুরুত্ত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
পৃথিবীতে মিষ্টি জল বা পানযোগ্য জলের পরিমাণ খুবই কম । যা দিনে দিনে আরো কমে যাচ্ছে । তার উপর দিনে দিনে পৃথিবীর জনসংখ্যা ও বেড়ে চলেছে । যে কারণে জল সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এছাড়াও জল সংরক্ষণের আরো কিছু গুরুত্ব রয়েছে –
1. কৃষিক্ষেত্রে জল এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করে । তাই আমরা যদি জল সংরক্ষণ কে গুরুত্ব না দিই তাহলে ভবিষ্যতে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে ।
2. বাঁধ দিয়ে জল সংরক্ষণ করে আমরা খুব সহজেই একটা পরিবেশ বান্ধব শক্তির উৎস পেতে পারি ।
3. পান করা ছাড়াও বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজে আমরা মিষ্টি জল ব্যাবহার করে থাকি ।
4. বিভিন্ন শিল্পে রোজ প্রচুর পরিমাণে জল ব্যাবহার করা হয় । তাই এখন থেকে সাবধান না হলে ভবিষ্যতে শিল্প জগতের জন্য গভীর সংকট আসতে পারে ।