প্রত্যেক মানুষেরই বিদেশের পরিবেশ, আবহাওয়া, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে বিশদে জানার সুপ্ত একটা ইচ্ছা থাকেই| আর সেই আগ্রহ থেকেই মনের মধ্যে ধীরে ধীরে সেই দেশ ভ্রমণের ইচ্ছাটা জেগে ওঠে | কিন্তু বিদেশ ভ্রমণের ইচ্ছা হলেই তো বেড়িয়ে পড়া যায় না, তার জন্য প্রয়োজন একটা সুদূর প্রসারী প্ল্যান| বিশেষত খরচের কথা মাথায় আসা মাত্র সমস্ত প্ল্যান জাস্ট উধাও হয়ে যায় | তাই তো?
আপনার মতো ভ্রমণ প্রিয় মানুষের জন্যই আজ রয়েছে বিদেশ ভ্রমণের কয়েকটা শ্রেষ্ঠ ঠিকানা | আর এই ভ্রমণের জন্য আপনার সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনার ও প্রয়োজন হবে না | প্রত্যেকটি ভ্রমণের খরচ, ভারতীয় মুদ্রার খরচের তুলনায় অনেকটাই কম | তাই সমস্ত চিন্তা ঝেড়ে ফেলে বেড়িয়েই পড়ুন নতুন দেশের সন্ধানে|
বিষয় সূচী
Toggleইন্দোনেশিয়া
মধুচন্দ্রিমার জন্য আজকাল অনেকেই বালিকে বেছে নেন। কম খরচে বিদেশ ভ্রমণের জন্য সেরা জায়গা হতে পারে ইন্দোনেশিয়া। ভারতীয় ১ টাকা ১৮০ ইন্দোনেশিয়া রুপির সমান। তাছাড়া ভারতীয়দের ভিসা নিয়েও এদেশে কোনও সমস্যা নেই। আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়েও এশিয়ার বিভিন্ন জায়গাকে হার মানাবে ইন্দোনেশিয়া।
শ্রীলঙ্কা
ভারত মহাসগরের বুকে অপুর্ব সুন্দর দ্বীপ রাষ্ট্র হল শ্রীলঙ্কা। মহাকাব্যের সৌন্দর্য যুক্ত দেশটিতে অনেক কম খরচেই ঘুরে আসতে পারবেন। এখানের সুন্দর সমুদ্র সৈকত ও সবুজ পাহাড়, আপনার ক্লান্তি দুর করে দেবে। পুজোর ছুটির দিনগুলিতে সহজেই শ্রীলঙ্কা ঘুরে আসতে পারবেন। এই সুন্দর দেশে আপনি খুব সহজেই কম খরচে এক সপ্তাহ কাটিয়ে আসতে পারবেন। এয়ার ইন্ডিয়া সহ একাধিক ভারতীয় বিমান পরিষেবা সংস্থা অনেক কম টাকায় শ্রীলঙ্কা ভ্রমনের সুযোগ দেয়।
থাইল্যান্ড
পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে থাইল্যান্ড সারা বিশ্বে বিখ্যাত। কিন্তু আপনি কি জানেন যে অনেক কম টাকা খরচেই এই দেশটিতে ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে। থাইল্যান্ডে গেলে ফুকেট ও ক্রাবি সৈকতে যেতে ভুলবেন না। তাছাড়া, রয়েছে প্রাচিন শহর আইউথ্যার ধ্বংসাবশেষ। আর ব্যাংককের পার্টি ও থাই ম্যাসেজতো রয়েছেই। মাত্র ৫০ হাজার টাকার মধ্যেই থাইল্যান্ড ভ্রমনের আনন্দ আপনিও নিতে পারবেন।
মালদ্বীপ
৮০ টি ছোট ছোট দ্বীপে সমাহার মালদ্বীপে একবার পা রাখলেই ‘গুড টাইমস’ পাক্কা। নিরিবিলি সাদা বালির সৈকত। চারিদিকে টারকোয়েজ জল। জলের নীচে প্রাণীগুলো ধরা পড়বে খালি চোখে। এতটাই স্বচ্ছ জল। এক্সপার্টরা বলছেন, ভারতীয়দের মালদ্বীপ এয়ারপোর্ট থেকে ৩০ দিনের ট্রাভেল ভিসা দেওয়া হয়। শুধুমাত্র রিটার্ন টিকিট আর পাসপোর্ট দেখালেই হবে। সমুদ্রের ধারে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার হোক বা সৈকতে একান্তে সময় কাটানো- দু’য়ের জন্যই মালদ্বীপ পারফেক্ট ডেস্টিনেশন। মালদ্বীপের সংস্কৃতির ঝলক পেতে হলে দেখুন বোডু বেরু নাচ। তাছাড়াও রয়েছে নানারকম ওয়াটার স্পোর্ট।
ভুটান
পাহাড়ের কোলে ঝুলন্ত তাকসাং বৌদ্ধ মঠ, ন’হাজার ফুট ওপরে ক্যাফে, পুনাখা জং, পারো জং, বুদ্ধ পয়েন্ট, ফোবজিখায় ব্ল্যাক নেকড ক্রেন। সবুজে ঘেরা স্বপ্নের দেশ ভুটান। শুধু বাঙালি কেন? দেশ-বিদেশের ট্যুর দেখবেন ভুটানে। পূর্ব হিমালয়ের এই দেশ সবচেয়ে আনন্দের জায়গা হিসেবে পরিচিত। অ্যাডভেঞ্চার, নেচার, ওয়েলনেস আর কালচার- চাররকমের প্যাকেজ আছে। ভুটানে যেতে ভারতীয়দের পাসপোর্ট লাগে না। পারো এয়ারপোর্টে বা ফুন্টসিলিংয়ে অভিবাসন অফিস থেকে পেয়ে যাবেন সাতদিনের বিশেষ পারমিট।
ফিলিপাইন
ঘুরতে ভালোবাসে অথচ ফিলিপাইনের নাম শুনেনি এমন মানুষ কম পাওয়া যাবে। এর আকর্ষণীয় সমুদ্র, সমু্দ্র তীরের সাদা বালু একে পরিণত করেছে এশিয়ার অন্যতম ট্রাভেল ডেসটিনেশন হিসেবে। এদেশের টাকার মান অন্য অনেক দেশের থেকে কম। এক পেসো সমান ০.০১৫ মার্কিন ডলার। ফিলিপাইনে প্রতিরাতে হোটেল খরচ হিসেবে গুণতে হবে ১৮.৩১ মার্কিন ডলার হতে ২২.৮৯ মাকিন ডলার।
তবে ডর্ম কিংবা হোস্টেলে বিল আরও কম আসবে। থাকার খরচ অপেক্ষা এই দেশে খাবার খরচ তুলনামূলক কম। প্লেটভর্তি স্ট্রিট ফুড পাওয়া যায় মাত্র তিন থেকে চার মার্কিন ডলারে। ফিলিপাইনে ম্যানিলা ও বোরোক্যা এই দুইটি জায়গা ঘুরে বেরানোর স্থান হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া খুবই কম খরচে ডাইভিং শেখা যায় এখানে। এর জন্যে গুণতে হবে মাত্র ১৩.৭৩ মার্কিন ডলার থেকে ১৮.৩১ ডলার।
কম্বোডিয়া
ইতিহাস আর ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে এমন পর্যটকদের জন্য কম্বোডিয়া আদর্শ একটি জায়গা। প্রাচীনকাল থেকে এই দেশে রাজতন্ত্র বিদ্যমান ছিল। যেহেতু অ্যাঙ্কোর শহরটিতে থাকার মতো হোটেল ব্যবস্থা নেই সেহেতু বেছে হবে সিম রিপ শহরটিকে এবং এখান থেকে ঘুরে বেড়াতে পারেন পুরো শহর। কম্বোডিয়ার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সিম রিপ, কে, কিলিং ফিল্ডস, আঙ্কোর ভাট, দ্য বায়ণ, ফনোম পেনহ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মায়ানমার
বিগত বছর দশ বছরে, মায়ানমার তার অত্যাশ্চর্য সৌন্দর্য, পরিবেশ, পার্ক এবং হ্রদের জন্য একটি দুর্দান্ত ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। আজকাল বহু ভারতীয় পর্যটকই সেখানে ভ্রমণ করতে ছুটে যান। আরেকটা বড় কারণ হল খরচও বেশ কম হয়। এখানে আসতে আপনার জনপ্রতি ৩৫-৪০ হাজার খরচ হতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহী
সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ভারতের মানুষের কাছে একটি প্রিয় গন্তব্য হিসেবে পরিচিত। এখানকার মরুভূমি এবং ক্যামেল রাইডস ভারতীয়দের আকর্ষণ করে। ওমান উপসাগরে ডাইভিং, মরুভূমিতে ক্যাম্পিং, কেনাকাটা ইত্যাদির জন্য এটি ভাল জায়গা। এই দেশের রাজধানী দুবাইকে নিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে একটি ভিন্ন ধরনের আবেগ রয়েছে। এখানে আপনি বুর্জ খলিফা দেখতে পারেন। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর আবুধাবিতে সাদা মার্বেলের মসজিদ ও অন্যান্য ভবন দেখতেও প্রচুর ভিড় হয়।
মিশর
সেই ইতিহাস বইয়ের হাত ধরে মিশরের সঙ্গে পরিচিতি। প্রাচীন সভ্যতা, নীল নদ, পিরামিডের মতো নানা ইমোশন জড়িয়ে আছে এখানে। যে টানে ছুটে আসেন লাখ লাখ মানুষ প্রতি বছর। আর মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যেও থাকে এটি। এখানে আসতে আপনার জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
আশা রাখি, সবাই নিশ্চই এতক্ষনে জেনে ফেলেছেন এখন বিদেশ ভ্রমণ কতটা সহজ ও সাশ্রয়কর । তাহলে আর দেরি কেন, চটপট ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়েই পড়ুন আপনার স্বপ্নের ডেস্টিনেশন-এর উদ্দেশ্যে