Sikkim Tourism

সিকিম ভ্রমণ (Sikkim Tourism): সিকিম , আয়তনের দিক থেকে ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য হলেও পাহাড় প্রেমীদের জন্য খুবই জনপ্রিয় শহর । উত্তর সিকিম , পূর্ব সিকিম, পশ্চিম সিকিম ও দক্ষিণ সিকিম  এই চার জেলার সমন্বয়ে গঠিত সিকিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ । আলপাইন চারণভূমি, পাহাড় , হিমবাহ ও হাজারো বুনো ফুলে ভরা সিকিমের গ্যাংটক ও লাচুংয়ের মতো উপশহরের প্রতিটি জায়গা পর্যটকদের মুগ্ধ করে । খুব সহজে ও কম খরচে যাওয়া যায় বলে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় সিকিমের অবস্থান ।

মেঘের বাড়ি সিকিম ঘোরার সবথেকে সহজ উপায় হল গ্যাংটককে কেন্দ্র করে ঘোরা। প্রথমবারের জন্য সিকিম হলে তো কথাই নেই। গ্যাংটক একেবারে ‘মাস্ট’। সিকিম মানেই পাহাড়ি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে যত উপরে উঠা। আলপাইন সৌন্দর্যের জন্য একে প্রায়ই “পূর্বের সুইজারল্যান্ড” বলা হয়।
গ্যাংটক এর অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান হলো এম.জি মার্গ বা মহাত্মা গান্ধী মার্গ। সুন্দর সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো দারুণ দর্শনীয় জায়গা এই এম.জি মার্গ। মাঝে বসার জায়গা, দুই পাশে সুসজ্জিত দোকানপাট, পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট – সবমিলিয়ে একটা অন্যরকম স্বর্গীয় পরিবেশ। এম.জি.মার্গে মহাত্মা গান্ধীর খুব সুন্দর একটি মূর্তি স্থাপিত আছে। গ্যাংটক শহরে রোপওয়ে আছে, উপর থেকে শহরটাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগে।
গ্যাংটক এর আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল ছাঙ্গুলেক। ছাঙ্গু লেকের স্থানীয় নাম সোমগো। গ্যাংটক থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে ১২ হাজার ৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই লেক। শীতকালে ছাঙ্গুলেকের জল জমে বরফ হয়ে যায়। লেকের চারিদিকে বরফে ঢাকা পাহাড়ের সৌন্দর্যই অন্যরকম। এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা একবার হলেও ইয়াকের পিঠে চড়েন। তবে এই রাস্তায় আসতে হলে আগে থেকেই অনুমতি নিয়ে আসতে হয়।
ছাঙ্গুলেক যাওয়ার পথেই পড়বে বাবা মন্দির। একই রাস্তায় তিনটি ঘোরার জায়গা ছাঙ্গু হ্রদ, নতুন বাবা মন্দির আর পুরানো বাবামন্দির বা বাবার বাঙ্কার।

Changu Lake

পেলিং

পশ্চিম সিকিম সবচেয়ে পরিচিত হিল স্টেশন হলেও নীল আকাশে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক শোভা দেখার জন্য, পেলিং পর্যটকদের পছন্দের স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পেলিংয়ের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। মোনাস্ট্রি, পাহাড়ি ঝর্না, লেক, উপত্যকা, নদী, কমলা লেবুর বাগান কী নেই! প্রকৃতি যেন অপরূপ সৌন্দর্য দু-হাত দিয়ে ভরিয়ে তুলেছে পেলিংকে।পেলিংয়ের খানিক নিচে রয়েছে দারাপ ভিলেজ, দারাপ থেকে আরও ৬ কিমি চললে পথের বাঁদিকে দেখা মিলবে সুন্দরী রিম্বি ঝর্ণার।
কাছেই রয়েছে রিম্বি অরেঞ্জ গার্ডেন, বাগানে নানান ফুলের গাছের পাশাপাশি রয়েছে অনেক কমলালেবুর গাছ। আরও খানিকটা নেমে রিম্বি নদী। খরস্রোতা পাহাড়ি নদী রিম্বি খোলা, নদীবক্ষে ছড়ানো প্রস্তরখন্ডের মধ্যে দিয়ে কলকল করে বয়ে চলেছে। পেলিংয়ের আরেকটি দর্শনীয় স্থান খেচেওপালরি লেক। পাহাড় ঘেরা এক নৈসর্গিক পরিবেশ। লেকের চারপাশ ঘিরে রয়েছে প্রচুর গাছ।তবে তার একটা আলাদা পরিচিতি আছে। এই লেকে একটিও পাতা ভাসতে দেখা যায় না, শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। স্থানীয় বাসিন্দারা এই লেকটিকে ইচ্ছেপূরণের লেক বলে। এখানে নাকি প্রার্থনা করলেই ইচ্ছেপূরণ হয়, এমন কাহিনী বর্ণিত আছে। পেলিংয়ের অনতিদূরে রয়েছে ঘন সবুজ পাহাড়ের প্রেক্ষাপটে দুগ্ধফেনিত জলধারা কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস।
এখানের আরেকটি অন্যতম আকর্ষণ স্কাই ওয়াক।  সমবেত বৌদ্ধ মন্ত্রের উচ্চারণে আর পাহাড়ি তিব্বতি সুরের যন্ত্র সঙ্গতে আত্মিক শান্তি লাভের জন্য কিছুটা সময় কাটাতেই পারেন প্রায় তিন শতাধিক বছরের প্রাচীন ‘পেমিয়াংসি মনাস্ট্রি’তে। উপাসনার সময়ে পৌছতে পারলে মেলে এক অনাবিল শান্তির হাতছানি। পেলিংয়ের সাইট সিয়িং ট্যুরের জন্য আরও রয়েছে দক্ষিণ দিকের সিংশোর ব্রিজ, ডেন্টাম ও নেপাল সীমান্তের কাছে পাহাড়ি গ্রাম উত্তরে। তবে বর্ষায় ধস নামলে পেলিং থেকে ডেন্টামের সংযোগকারী রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় বেশিরভাগ সময়ে।

লাচুং

প্রকৃতির কোলে ছবির মতো সেজে আছে লাচুং নামের এই পাহাড়ি গ্রাম। জনবসতি খুবই কম। পাহাড় ও বনভূমি নিঝুম। এগাঁয়ে আকাশ ছুঁয়েছে পাইন, ফার আর ধুপিগাছের সারি। আর আছে নানান প্রজাতির রডোডেনড্রন। পাশে বয়ে চলেছে তিস্তা। এই তিস্তারই শাখা প্রশাখা নদী লাচুং ও লাচেন।
লাচুং গ্রামের কার্পেট বুনন কেন্দ্র ও গুম্ফাটিও দেখে নিন যদি হাতে সময় থাকে।

ইয়ুমথাং

Yumthang Valley

১১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ইউমথাং-এর আর এক নাম হল ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার’। এপ্রিল-মে মাসে এখানে যেন জলসা বসে যায় ফুলের। বিভিন্ন প্রজাতির রডোডেনড্রন, প্রিমুলা ও আরও নানা ধরনের ফুলের সমারোহে তখন সত্যিই নন্দনকানন হয়ে ওঠে এই উপত্যকা। শীতকালে এলে (ডিসেম্বর থেকে মার্চ) আবার এই উপত্যকাকেই দেখতে পাবেন এক অন্য রূপে। বরফের সাদা পোশাকে তখন আবৃত থাকে পুরো ইয়ুমথাং অঞ্চল। মনে হবে বুঝি তুষার সাম্রাজ্যেই এসে পড়েছি। উঁচু পাহাড়ের সারি, উপত্যকা, রাস্তাঘাট— সবই সে সময় ঢাকা থাকে পুরু বরফের আস্তরণে।

কীভাবে যাবেন ?

এনজেপি স্টেশন বা বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি বা শেয়ার জিপ মেলে গ্যাংটক যাওয়ার জন্য। দু’ জায়গাতেই প্রিপেড ট্যাক্সি পাওয়া যায়। চেষ্টা করবেন সিকিম রেজিস্ট্রেশনের গাড়ি নিতে। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেজিস্ট্রেশনের গাড়ি নিলে সেই গাড়ি নামিয়ে দেবে গ্যাংটক সিটি সেন্টারের ২ কিমি নীচে দেওরালিতে। সেখান থেকে লোক্যাল ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে পৌঁছোতে হবে।

এছাড়া সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্টের (SNT) বাস চলাচল করে শিলিগুড়ি-গ্যাংটক রুটে। এনজেপি স্টেশন থেকে অটো ধরে চলে আসুন শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে, তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনালের পাশে এসএনটি বাসস্ট্যান্ডে।

চাইলে কলকাতা থেকে বিমানে পাকিয়ং যেতে পারেন। পাকিয়ং থেকে জীপে গ্যাংটক।

কোথায় থাকবেন?

সিকিমের লাচুং, গ্যাংটক ও এম জি মার্গে প্রচুর হোটেল, মোটেল এবং হোমস্টে আছে । হোটেল ভাড়া প্রতি রাতের জন্য দুই থেকে তিন হাজারের মধ্যে । অবশ্য পর্যটন মৌসুমে তা বেড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ও হতে পারে ।

এছাড়াও যেগুলো দেখতে পারেন –

নামচি: বর্তমানে চার ধাম যাত্রার মধ্যে বিবেচিত হয় এই ধর্মীয় স্থানটি। নগদাক মনেস্ট্রি, দলিং গুম্পা, নামচি রক গার্ডেনের মত একাধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে এখানে।
রাভাংলা: গোল্ডেন বুদ্ধা মূর্তির জন্য সিকিমের এই রাভাংলা একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। তাছাড়া এখানে রয়েছে একাধিক পুরনো মনেস্ট্রি এবং ট্রেকিংয়ের রুট।
বরং: রাভাংলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত বরং। যেখান থেকে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য আর দেখা পেতে পারেন বহু নামি ও অনামি পাখির।
সিকিপ: রঙ্গিত নদীর তীরে অবস্থিত সিকিপ। নদীর ধারে খোলা আকাশের নীচে প্রকৃতির মাঝে তাবুতে রাত কাটাতে চাইলে ঘুরে আসুন সিকিপ।

By Amit Kumar Basak

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী অমিত এখন বেসরকারী চাকুরীরত । পড়াশোনার পাশাপাশি লেখাটাও তার একটা নেশার মধ্যে পরে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *