Sheikh Hasina

শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) : আমরা সবাই জানি শেখ হাসিনা ওয়াজেদ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় প্রধান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও। তিনি এমন একজন প্রধানমন্ত্রী যিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করে আসছেন । তিনি মোট ৭ বার সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন।

শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ২৮ সে সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে গোপালগঞ্জের মধুমতী নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার বড় সন্তান শেখ হাসিনা।শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা, শেখ রাসেলসহ শেখ হাসিনার পাঁচ ভাইবোন ছিল। তবে বর্তমানে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, মাতা ফজিলাতুন্নেছা সহ সবাই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে প্রাণ হারান ।

শিক্ষা

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। তিনি ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকে (অনার্স) ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

তার লেখা কিছু বই : শিল্প, সংস্কৃতি ও সাহিত্য অন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা লেখালেখিও করেন। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। শেখ হাসিনার প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘সাদা কালো’, ‘ওরা টোকাই কেন’, ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ’, ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’, ‘আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম’, ‘সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র’, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন’, ‘বিপন্ন গণতন্ত্র’, ‘সহে না মানবতার অবমাননা’, ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ ইত্যাদি।

কর্মজীবন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ জয় লাভের পর ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সালে শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
এর আগে ও শেখ হাসিনা ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে প্রথমবার, ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে দ্বিতীয়বার এবং ২০১৪-২০১৮ মেয়াদে তৃতীয়বারের মত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনা চতুর্থ, পঞ্চম ও অষ্টম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণআন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়ার সরকার ১৫ দিনের মাথায় ৩০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

sheikh-hasina

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৬৮ সালে, হাসিনা বাংলাদেশী পদার্থবিদ, লেখক এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান এম এ ওয়াজেদ মিয়া কে বিয়ে করেন ।
শেখ হাসিনার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ একজন তথ্য প্রযুক্তিবিদ। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টাও। আর মেয়ে সায়মা হোসেন ওয়াজেদ একজন মনোবিজ্ঞানী এবং তিনি অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে কাজ করছেন। শেখ হাসিনার নাতি-নাতনির সংখ্যা সাত। তাঁর স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ সালের ৯ মে মারা যান । এর পর ২০১৭ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি ।তার পুরো রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে, শেখ হাসিনাকে মোট ১৯ বার মারার চেষ্টা করা হলো তিনি বেঁচে গেছেন।

পারিবারিক হত্যা, নির্বাসন ও প্রত্যাবর্তন

তার স্বামী, সন্তান এবং বোন শেখ রেহানা ছাড়া , হাসিনার পুরো পরিবারকে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বাংলাদেশী অভ্যুত্থানের সময় হত্যা করা হয়েছিল । হত্যার সময় হাসিনা, ওয়াজেদ ও রেহানা ইউরোপ সফরে ছিলেন। তারা পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে আশ্রয় নেয় , ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করার আগে। পরিবারের বেঁচে থাকা সদস্যরা ছয় বছর ধরে ভারতের নয়াদিল্লিতে নির্বাসনে বসবাস করেন। সেই সময়ে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা দেয় । ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর, হাসিনা ১৭ই মে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং হাজার হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কাজ থেকে তিনি স্বাগত পান । ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তাঁকে হত্যার উদ্দেশে বড় ধরনের হামলা করা হয়। ওই দিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে এক ডজনেরও বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোড়া হয়। সেই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ তাঁর দলের ২২ নেতা-কর্মী নিহত হন এবং ৫০০ ও বেশি মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান সেই হামলায় ।

পুরস্কার লাভ

শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন ডিগ্রি এবং পুরস্কার প্রদান করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সুদীর্ঘ ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে ইউনেসকো তাঁকে ‘হুপে-বোয়ানি’ (Houphouet-Boigny) শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করে। এ ছাড়া তিনি ব্রিটেনের গ্লোবাল ডাইভার্সিটি পুরস্কার এবং দুবার সাউথ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৪ সালে ইউনেসকো তাঁকে ‘শান্তির বৃক্ষ’ এবং ২০১৫ সালে উইমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাঁকে রিজিওনাল লিডারশিপ পুরস্কার এবং গ্লোবাল সাউথ-সাউথ ডেভেলপমেন্ট এক্সপো-২০১৪ ভিশনারি পুরস্কারে ভূষিত করে। বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অব্যাহত সমর্থন, খাদ্য উৎপাদনে সয়ম্ভরতা অর্জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদানের জন্য আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ সালে তাঁকে সম্মাননা সনদ প্রদান করে।
জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এ ছাড়া টেকসই ডিজিটাল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য International Telecommunication Union (ITU) শেখ হাসিনাকে ICTs in Sustainable Development Award-2015 প্রদান করে। এ ছাড়া মাদার তেরেসা পদক, এমকে গান্ধী পদক পেয়েছেন শেখ হাসিনা।

স্বাধীনতার পর থেকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। বলাই যায় নিজের কাছের মানুষদের হারিয়েও শেখ হাসিনার মনোবল কোন অংশে কমাতে পারেনি বিরোধী দলের নেতারা । নিজের সাহস ও চেষ্টার মাধ্যমে তিনি সবসময় জয়ী হয়েছেন ।এছাড়া রাজনীতির পাশাপাশি শেখ হাসিনার রান্না, সংগীত এবং বই পড়ার প্রতি আগ্রহ রয়েছে

By Amit Kumar Basak

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী অমিত এখন বেসরকারী চাকুরীরত । পড়াশোনার পাশাপাশি লেখাটাও তার একটা নেশার মধ্যে পরে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *