অরিজিৎ সিং (Arijit Sing) : এই মুহূর্তে গানের জগতে যিনি সবচেয়ে বেশি চর্চিত তিনি হলেন অরিজিৎ সিং । তার কন্ঠে যে মা সরস্বতী বিরাজমান তা কিন্তু আমরা সবাই জানি। তার সুর তার গান পুরো জগত কে করেছে পাগল। তার গাওয়া দুঃখের গান যেমন শুনলে মানুষের চোখে জল আসে তেমনি তার রোমান্টিক গান শুনলে মানুষের মন নেচে ওঠে। শুধু যে তিনি গানের জন্যই প্রতিটি মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন তা কিন্তু নয়। তিনি তার নম্র ব্যক্তিত্ব এবং সরল জীবনযাপনের জন্যও পরিচিত ।
তিনি ২০০৫ সালে ভারতীয় জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠান ফেম গুরুকুল মাধ্যমে পরিচিতি পান । অরিজিৎ সিং হিন্দির পাশাপাশি বাংলা গানের জগতে ও নিজের প্রতিভা সমান তালে প্রকাশ করে যাচ্ছে । টলিউড পাশাপাশি বলিউডেও তাঁর গাওয়া অসংখ্য হিট গান রয়েছে। বলিউডে তাঁর গাওয়া প্রথম গান ছিল মিথুনের সঙ্গীত পরিচালনায় মার্ডার ২ মুভির ফির মহব্বত গানটি। গানটি সে সময় ভালই জনপ্রিয়তা লাভ করে। তবে, ২০১৩ সালে মুকেশ ভাটের প্রযোজিত ছবি আশিকি ২-তে কয়েকটি গানে কন্ঠ দেওয়ার পর তিনি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
বিশেষত ওই ছবিতে তুম হি হো গানটি গাওয়ার পর তিনি সঙ্গীতপ্রেমীদের আইকন হয়ে ওঠেন। ওই গানটি গাওয়ার জন্য তিনি ৫৯ তম ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস-এ সেরা পুরুষ গায়কের পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৪ সালে তিনি জিৎ গাঙ্গুলীর সুুর ও কমপোজ করা মুসকুরানে গানটি গান। এই গানের জন্য সে বছর তিনি সবচেয়ে বেশি নমিনেশন পান। ২০১৬ সালে তিনি সুরাজ ডুবা হ্যায় গানের জন্য ও ২০১৭ সালে এ দিল হ্যায় মুশকিল গানের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। এ ভাবে ধীরে ধীরে তিনি সঙ্গীত জগতে নিজের এক আলাদা অবস্থান নিশ্চিত করেন।
বিষয় সূচী
Toggleঅরিজিৎ সিং এর জন্মবৃত্তান্ত (Personal Details of Arijit Sing)
অরিজিৎ সিং ১৯৮৭ সালের ২৫ শে এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে জন্মায় । বাবা কক্কর সিং একজন পাঞ্জাবী শিখ এবং মা অদিতি সিং বাঙালি হিন্দু পরিবারের । অরিজিৎ সিংয়ের ডাক নাম সুমু। অরিজিৎ সিং এর ২৫ শে এপ্রিল জন্মদিন হলেও তিনি ঘটা করে কোনদিন নিজের জন্মদিন পালন করেন না।
অরিজিৎ সিং এর শিক্ষা (Education of Arijit Singh)
রাজা বিজয় সিং স্কুলে কেটেছে তার ছোট বেলা। বর্তমানে তিনি এই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি ।ইতি মধ্যেই তৈরি করছেন খেলার মাঠ। সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই অযত্নে পড়েছিল খেলার মাঠটি । অরিজিৎ সিং-এর তত্ত্বাবধানে নতুন ভাবে গড়ে উঠছে এই মাঠ। একটি ক্রীড়া কেন্দ্র ও গড়ে তুলেছেন তিনি । যাতে ফের শুরু করা যায় ক্রিকেট খেলা। স্কুলে খেলা ও ক্রীড়া কেন্দ্র গড়ে উঠলে উপকৃত হবেন এলাকার, স্কুলের ছাত্র ও ছাত্রীরা এবং যুবকরা ও ক্রীড়া প্রেমীরা বলে মনে করেন তিনি ।মুর্শিদাবাদের ভূমিপুত্র অরিজিৎ সিংয়ের গানের জন্যেই ভুবন জোড়া নাম। সঙ্গীত জীবনের চর্চার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। সমাজ কল্যাণের ব্রত নিয়েই কার্যত নিজের খরচে বিভিন্ন জনহিতকর কাজেই নিয়োজিত রয়েছেন তিনি।
অরিজিৎ সিং এর গানের প্রথম শিক্ষক কে ছিল ?
অরিজিৎ সিং এর প্রথম সঙ্গীত চর্চা শুরু হয় বাড়ি থেকেই । তার প্রথম শিক্ষাগুরু ছিলেন তার মা অদিতিসিং । তাঁর মামী ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং তাঁর নানী গান করতেন। তার মামা তবলা বাজাতেন এবং তার মাও তবলা বাজাতেন ও গান গাইতেন । অরিজিৎ সিং পড়াশোনাতে যেমন ভাল ছিলেন তেমনি সঙ্গীতের প্রতি বেশি যত্নশীল ছিলেন । সংগীতের প্রতি তার ভালোবাসা দেখে বাবা-মা তাকে পেশাগতভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি রাজেন্দ্র প্রসাদ হাজারীর কাছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখিয়েছিলেন এবং ধীরেন্দ্র প্রসাদ হাজারীর কাছে তবলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। বীরেন্দ্র প্রসাদ হাজারী তাকে রবীন্দ্রসংগীত ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ও সুর করা গান ) এবং পপ সঙ্গীত শিখিয়েছিলেন । তিন বছর বয়সে, তিনি হাজারী ভাইদের অধীনে প্রশিক্ষণ শুরু করেন এবং নয় বছর বয়সে তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে কণ্ঠে প্রশিক্ষণের জন্য সরকারের কাছ থেকে একটি বৃত্তি পান ।
অরিজিৎ সিং এর ব্যক্তিগত জীবন (Personal Life of Arijit Singh)
অরিজিৎ সিং পারিবারিকভাবে প্রথম বিবাহ করেন ২০১২ সালে। কিন্তু সে সংসার টেকেনি। বছরখানেক পরে প্রথম বিবাহ-বিচ্ছেদের পরে, তার ছেলেবেলার বান্ধবী কোয়েল রায়কে আবার বিয়ে করেন।একই স্কুলে পড়াশোনা করতেন তাঁরা। কোয়েল রায়ের ও প্রথম বিয়ে সেভাবে টেকেনি । তারও ডিভোর্স হয়ে যায় ।কোয়েল রায় প্রাইমারি স্কুলের পূর্বতন শিক্ষিকা এবং তাঁর নিজস্ব একটা এন.জি.ও সংস্থা রয়েছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে চুপিসাড়ে তারাপীঠ মন্দিরে একেবারে কাছের বন্ধু- বান্ধব ও আত্মীয়দের নিয়ে সাত পাকে বাঁধা পড়েন কোয়েল-অরিজিৎ। কাউকেই এই বিয়ের ব্যাপারে টের পেতে দেননি বলিউডের এই নামজাদা গায়ক।অনেক বাঁধা পেরিয়ে ২০১৪-তে এক হোন ছোটবেলার দুই কাছের বন্ধু।
শোনা যায়, কোয়েলের কাছে প্রেমের প্রস্তাব গিয়েছিল অরিজিৎ-এর তরফেই। এরপর তিনিও প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। কোয়েলের প্রথম পক্ষে একটি ছেলে ছিল । দ্বিতীয় স্ত্রী কোয়েলের প্রথম পক্ষের সন্তানকেও নিজের সন্তানের মতন সারাক্ষণ আগলে রাখেন অরিজিৎ। অরিজিৎ-কোয়েলেরও দুই সন্তান রয়েছে-এক ছেলে ও এক মেয়ে। তিন সন্তানকে নিয়ে ভরপুর সুখী পরিবার তাঁদের। সাধারণত মিডিয়ার সামনে আসা খুব একটা পছন্দ করে না অরিজিৎ ,তবে কনসার্টগুলিতে ভক্তদের নিরাশ করে না । ভক্তদের সঙ্গে মেতে ওঠেন। তিনি ২০১৮ সালে ভারতের গায়কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কনসার্ট করেছেন এবং তিনি প্রতি বার দুর্গা পূজা তে নিজের বাড়ি জিয়াগঞ্জের থাকতেই পছন্দ করেন । তবে যে শুধু দুর্গাপুজো তা নয়। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও ভিটেমাটির টানে বারে বারে ফিরে আসেন মূর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে।
অরিজিৎ সিং এর পুরস্কার (Awards of Arijit Singh)
অরিজিৎ সিং এ পর্যন্ত ১ টি জাতীয় পুরষ্কার, ৭ টি ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার, ২ টি ফিল্মফেয়ার বাংলা পুরষ্কার, ৫ টি IIFA Award, ২ টি Guild Award, ৫ টি GIMA Award, ৫ টি জি-সিনে পুরস্কার সহ মোট ৯৮ টি পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। অভিজিৎ সিং এখন অব্দি ৩৩৪ বার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তুমহিহো গানের মাধ্যমে অরিজিৎ সিং পুরষ্কারের হালখাতা করেন। তিনি ৭ বার ফিল্মফেয়ার জিতে সর্বোচ্চবার এই পুরষ্কার জেতার দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। বিখ্যাত শিল্পী কিশোর কুমার এই পুরষ্কারটি রেকর্ড পরিমান ৮ বার জিতেছেন।তিনি ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত টানা ৫ বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়ে রেকর্ড তৈরি করেন। এর আগে টানা ৫ বার এই পুরস্কার পাওয়ার রেকর্ড ছিল কুমার শানুর।
স্বীকৃতি (Recognition)
একটি সাক্ষাৎকারে সঙ্গীত পরিচালক এবং সুরকার, প্রীতম বলেছিলেন: “অরিজিৎ একজন ভাল গায়ক, এবং একজন বুদ্ধিমান সঙ্গীতশিল্পী (Pritam said: “Arijit is a good singer, a smart musician, and an intelligent musician as well.)।
সঙ্গীত পরিচালক জুটি বিশাল-শেখরের বিশাল দাদলানি বলেন, সিং একজন অসাধারণ গায়ক। (“Arijit has the ability and the openness needed to make every recording a genuine collaboration. He’s also a really nice guy, with no ego. That helps.”)
শ্রেয়া ঘোষাল মন্তব্য করেছেন যে তিনি “বহুমুখী এবং একটি প্রাণময় কণ্ঠস্বর এর অধিকারী “। (Shreya Ghoshal remarked that he “is versatile and has a soulful voice”.)
অরিজিৎ সিং কেরিয়ারের শুরুর দিকে মঞ্চে শো করার জন্য ৩০ লাখ টাকা নিতেন। তারপর সেই রেট বেড়ে ৫০ লাখ হয়।তবে ২০১৬ সালে দাঁড়িয়ে মঞ্চে লাইভ শো করার জন্য নাকি এক থেকে দেড় কোটি টাকা নিতেন অরিজিৎ সিং। বর্তমানে সেই টাকার অঙ্কটা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে । ৪৫ মিনিটের শো করার জন্য দেড় কোটি টাকা পারিশ্রমিক নেন অরিজিৎ। বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্তরেও সুপারস্টার হিসেবে পরিচিত হওয়ায় তার পারিশ্রমিক যে অনেকটাই বেড়েছে তা বলাই বাহুল্য।
অরিজিৎ সিং একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তিনি তার “লেট দিয়ার বি লাইট” নামের এনজিওর মাধ্যমে মানুষের সেবা করতে পছন্দ করবেন যা দারিদ্র্য সীমার নীচের সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করে। তার এনজিওর লক্ষ্য হল ব্লাড ব্যাঙ্ক ক্যাম্প, দারিদ্র্য সীমার নীচের শিশুদের জন্য জামাকাপড়, বই, স্টেশনারি ইত্যাদি বিতরণ করা ।
আরো দেখতে পারেন এরিকা রবিন মিস ইউনিভার্স
References: Wikipedia.
All Pictures are taken from the internet.