Kedarnath YatraKedarnath Yatra

Kedarnath Yatra : যাঁরা তীর্থ করতে ভালবাসেন তাঁদের কাছে তো বটেই, এমনকি ট্রেকিং করেন যাঁরা, তাঁদের কাছেও কেদারনাথ ভ্রমণ স্বপ্নের মতো। চারধামের মধ্যে অন্যতম হল কেদারনাথ মন্দির। মে-জুন মাস জুড়ে এখানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। তারপর বর্ষা ঢুকতেই আবার বন্ধ হয়ে যায় ট্রেকিং। এরপর আবার কেদারনাথ ট্রেকিং শুরু হয় সেপ্টম্বরে। অক্টোবরের শেষে বন্ধ হয়ে যায় কেদারনাথ মন্দিরের দরজা।

কিন্তু কেদারনাথ যেতে অনেকেরই অনেক ধরণের প্রশ্ন থাকে, কেমন করে যাবো, কোথায় থাকবো, কত কি.মি হাঁটতে হবে, হেলিকপ্টার এ কেমন করে যেতে হয় বুকিং প্রসেস কি, থাকা খাওয়ার কি কি ব্যবস্থা আছে, কেদারনাথ কোন সময়ে গেলে বেটার এরকম আরো সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

ভারতের দ্বাদশ জ্যোতিলিঙ্গের অন্যতম, এবং পঞ্চ কেদারের প্রথম কেদার হল এই কেদারনাথ মন্দির, তাছাড়া উত্তরাখন্ডের চার ধামের অন্যতম এই কেদার ধাম। কেদারনাথ মন্দিরের বহু ইতিহাস আছে, সেদিকে আজ আর গেলাম না। এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠাকাল সম্বন্ধে সঠিকভাবে কিছু বলা না গেলেও  মোটামুটি ধারণা করা হয় যে অষ্টম শতকে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। কেদারনাথ মন্দিরের সাথেই জড়িয়ে আছে জগৎগুরু শঙ্করাচার্যের নাম। কেদারনাথ মন্দিরের অবস্থান হল উত্তরাখন্ডের গাড়োয়াল রিজিয়নের রুদ্রপ্রয়াগ জেলায়। সমুদ্রতল থেকে প্রায়. ৩৫৮৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই মন্দির। বছরের ছ-মাস একদমই এখানে যাওয়া যায়না। এই ছ-মাসে কেদারনাথ ধাম ও আসে পাশের এলাকা বরফের মোটা চাদরে আবৃত থাকে।

কেদারনাথ পৌঁছনোর জন্য আপনাদের কয়েকটি ধাপে পৌঁছতে হবে –

  • ভারতের যে কোনো জায়গা থেকে ঋষিকেশ বা হরিদ্বারে পৌঁছতে হবে ।
  • ঋষিকেশ বা হরিদ্বার থেকে বাস, ক্যাব বা পার্সোনাল গাড়ি করে শোনপ্রয়াগ।
  • শোনপ্রয়াগ থেকে লাইন গাড়ি করে গৌরীকুন্ড। লাইন গাড়ি আছে তারা আপনাদের 30 টাকার বিনিময়ে পৌঁছে দেবে গৌরীকুন্ড।
  • গৌরীকুন্ড থেকে আপনাকে হাঁটা পথ বা ট্রেক করে(৭-৮ ঘন্টা) নয়তো ঘোড়া বাঁ খচ্চরের করে নয়তো পিঠে  ১৬ কি.মি পথ অতিক্রম করে আপনাকে পৌঁছতে হবে কেদারনাথ মন্দির। ভাড়া নিতে পারে ২-৩ হাজার টাকার মধ্যে।
  • আর যারা কেদারনাথ হেলিকপ্টারে যেতে চান তাদেরকে শোনপ্রয়াগ না গিয়ে ফাটা, গুপ্তকাশি বা আসে পাশের এক দুটা জায়গায় নামতে হবে, সময় লাগবে ৫-৬ মিনিট।

কেদারনাথ যাত্রার সেরা সময় (Best Time to Visit Kedarnath)

কেদারনাথ মন্দির বছরের ছয় মাস একদম পুরোপুরি বন্ধ। নভেম্বর থেকে মে এই ছয় মাসের মধ্যে কেদারনাথ পৌঁছোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।কেদারনাথ মন্দিরের দরজা খোলার নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নেই তবে তিথি আছে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের (ইংরাজির মে মাসে) অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মন্দিরের দরজা খোলা হয়। ওই দিন মহাসমারোহে কেদারনাথের শীতকালীন আবাসস্থল উখিমঠের ওমকারেশ্বর মন্দির থেকে কেদারনাথ মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। একে ডোলি যাত্রা বলে এই যাত্রা দেখার জন্য ওই দিন প্রচুর মানুষের ভিড় হয়, কারণ এই দিন খুব কাছ থেকে কেদার বাবার পঞ্চমুখী মূর্তির দর্শন পাওয়া যায় আবার একই ভাবে প্রতি বছর নভেম্বরে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া বা ভাই ফোটার দিন মন্দিরের দরজা সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই দিন ও একই পদ্ধতিতে খালি পায়ে কেদার বাবাকে ওমকারেশ্বর মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। বছরের ছয় মাস এখানেই পুজিত হোন বাবা তাই কেউ যদি দর্শন করতে চান উখিমঠের ওমকারেশ্বর মন্দিরে গিয়ে অবশ্যই ঘুরে আসুন। তাই আপনাকে কেদারনাথ মন্দির যেতে হলে অক্ষয় তৃতীয়া থেকে ভাইফোঁটার (মে থেকে নভেম্বর) মধ্যেই কোনো দিন ঠিক করতে হবে।

কেদারনাথ গিয়ে কোথায় থাকবেন (Where to Stay During Kedarnath Yatra)

কেদারনাথে থাকার মতো প্রচুর হোটেল, আশ্রম, ধর্মশালা আছে । মন্দিরের পাশে যেগুলো হোটেল, সেগুলো খুবই দামী। ২৫০০ থেকে ৩০০০ প্রতিজন। এখানে বেশীরভাগ হোটেলেই  হোটেল খরচা জনপ্রতি হিসেবে। মন্দির থেকে একটু দূরে হোটেল ভাড়া  একটু কম হয় ।  কেদারনাথ মন্দিরের অনেক পুরোহিত আছে তাদের নিজস্ব ঘর থাকে, তাদের ঘর গুলো যদি ভাড়া করতে পারেন তাহলে আরো একটু কমে পেয়ে যাবেন । আবার  কেউ চাইলে GMVN গেস্ট হাউস বুক করতে পারেন ।

কেদারনাথ যাত্রার সময় অন্নান্য দর্শনীয় স্থান (Places to Visit During Kedarnath Yatra)

তপোবন –
বিগত কয়েক বছর ধরে তপোবন একটা উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে । দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ প্রতি বছর এখানকার ফুলের বাগান দেখতে আসেন।

গোমূখ –
এই হিমবাহ টি হিন্দুদের পবিত্র নদী গঙ্গার উৎস ।  তাই হিন্দুদের কাছে এটি বিশেষ প্রসিদ্ধ । গঙ্গোত্রি থেকে মাত্র 18 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হিমবাহের মুখটা অনেকটা গরুর মতো তাই এর এমন নাম।

চপ্টা –
এখানকার সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য । এছাড়াও এখানে বিভিন্ন ধরনের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস হয় ।

হেমকুন্ড সাহিব –
শিখদের দশম গুরু গুরু গোবিন্দ সিংকে উৎসর্গ করা এই পঞ্চভুজ গুরুদ্বার। শুধু শিখ নয়, ভারতজুড়ে বিভিন্ন ধর্মের মানুষেরা এই হেমকুণ্ড সাহিবে আসেন।
জোশীমঠ থেকে প্রথমে গোবিন্দঘাট তারপর ঘাঙ্গারিয়া। এই ঘাঙ্গারিয়া হল হেমকুণ্ড সাহিবের প্রথম বেসক্যাম্প। এই ঘাঙ্গারিয়া থেকে ফুলের উপত্যকা ঘুরে পৌঁছে যেতে পারেন হেমকুণ্ড সাহিব।

আওলি –
ভারতের উত্তরাখণ্ডের নীলকণ্ঠ, নামা পর্বত, নন্দাদেবী পর্বতমালার মাঝে ২৮০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত শুভ্র প্রস্তর তুষারে ঢাকা হিল স্টেশন আউলি, যেখানে রয়েছে এশিয়ার দীর্ঘতম এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম রোপওয়ে স্টেশন (৩.৭৫ কিমি)। আউলি উত্তরাখণ্ডের হিমালয় পর্বতমালার চামোলি জেলায় অবস্থিত। গড়ওয়ালিতে আউলি ‘বুগিয়াল’ নামে পরিচিত, যার অর্থ হলো তৃণভূমি। আউলি উপত্যকায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিপন্ন প্রজাতির ফুল, উদ্ভিদ(প্রায় ৫২০ রকমের) দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও সংযুক্ত ও গাছের বন দ্বারা ঘেরা উপত্যকাটি পর্যটকদের এক মনোরম দৃশ্য প্রদান করে। শীতকালীন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের এক অন্যতম জায়গা এই আউলি। শীতকালে এখানে এক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

বাসুকি তাল –
কেদারনাথ মন্দিরের কাছে অবস্থিত এই হ্রদ তার সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে

কিছু টিপস (Pro Tips)

  • সব সময় আরামদায়ক এবং গরম পোশাক পরুন।
  • ভালো না লাগলে যাত্রা করার চেষ্টা করবেন না।
  • সব ধরনের ওষুধ সঙ্গে রাখবেন।
  • আপনার পরিবার/বন্ধুদের কাছাকাছি থাকুন।
  • জরুরি প্রয়োজনে কোনো ধরনের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখুন।
  • আপনি যদি রুট সম্পর্কে নিশ্চিত না হন তবে একটি গাইড ভাড়া করুন/মানচিত্র ব্যবহার করুন।
  • নিরাপত্তার জন্য একটি সস্তা/স্থানীয় সেলফোন সঙ্গে রাখুন।
  • সঙ্গে কর্পূর রাখুন, ট্রেক বা হাঁটার সময় যদি অতিরিক্ত শ্বাস কষ্ট হয় তবে একটু শুকে নিন , তৎক্ষণাৎ আরাম পাবেন ।

By Amit Kumar Basak

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী অমিত এখন বেসরকারী চাকুরীরত । পড়াশোনার পাশাপাশি লেখাটাও তার একটা নেশার মধ্যে পরে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *