Sri Sri Ravi ShankarSri Sri Ravi Shankar

শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর (Sri Sri Rabishankar) : শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর হলেন ভারতের একজন আধ্যাত্মিক গুরু। যিনি ১৩ মে ১৯৫৬ সালে তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণ করেন। রবি শঙ্করের নাম রবি শঙ্কর রাখা হয়েছিল কারণ , তার জন্ম হয়েছিল একটি রবিবার, এবং “শঙ্কর” অষ্টম শতাব্দীর হিন্দু সাধক আদি শঙ্করের পরে , যার জন্মদিন ছিল একই দিনে। শিশুকাল থেকেই তিনি প্রতিভাদীপ্ত ছিলেন । চার বছর বয়সে, এক প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থ, ভগবদ্গীতা থেকে তিনি আবৃত্তি করতে পারতেন । এমনকি প্রায়শঃ তাকে ধ্যানমগ্ন দেখা যেত । মহাত্মা গান্ধীর দীর্ঘদিনের সহকর্মী শ্রী সুধাকর চতুর্বেদী ছিলেন তাঁর প্রথম শিক্ষক। তিনি বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। স্নাতকের পর, তিনি তার দ্বিতীয় শিক্ষক মহর্ষি মহেশ যোগীর সাথে ভ্রমণ করেন , বৈদিক বিজ্ঞানের উপর বক্তৃতা দেন এবং সম্মেলনের আয়োজন করেন এবং ট্রান্সসেন্ডেন্টাল মেডিটেশন এবং আয়ুর্বেদ কেন্দ্র স্থাপন করেন। তিনি যেমন জ্ঞানী মানুষ ছিলেন তেমনি যুগপৎ পদার্থবিদ্যা এবং বৈদিক সাহিত্যে প্রথাগত শিক্ষা অর্জন করেছেন । তার অনেক অভিজ্ঞতার জন্যই তাকে শ্রী শ্রী উপাধিতে বা গুরুদেব বা গুরুজি নামেও ডাকা হয়। ১৯৮১ সালে তিনি আর্ট অব লিভিং ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, যার মূল লক্ষ্য হল, মানুষের ব্যক্তিগত মনোদৈহিক চাপ, সামাজিক সমস্যা এবং সহিংসতা দূর করা। ১৯৯৭ সালে, তিনি ইন্টারন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান ভ্যালুজ নামে একটি জেনেভাভিত্তিক এনজিও দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যা ত্রাণ কর্মকাণ্ড ও প্রান্তিক উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং বৈশ্বিক-মূল্যবোধের বিনিময়কে উৎসাহিতকরণের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। তার অবদানের জন্য, তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মানজনক পদক লাভ করেছেন। যেমন , ভারত, পেরু, কলম্বিয়া এবং প্যারাগুয়ে। ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি , ২৮শে মার্চ, ২০১৬ সালে নতুন দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি সিভিল ইনভেস্টিচার অনুষ্ঠানে রবি শঙ্করকে পদ্মবিভূষণ পুরস্কার প্রদান করছেন । এছাড়াও তিনি আরো অনেক সম্মানিত পুরস্কার লাভ করেছেন ।

জ্ঞানের প্রসারণ

মানবপ্রেমী শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর-এর প্রকল্পগুলি বিভিন্নস্তরের মানুষের কাছে বিভিন্ন সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে । প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, আতঙ্কবাদ ও যুদ্ধে আক্রান্ত মানুষ, দারিদ্র্যের প্রান্তিক সীমায় অবস্থিত শিশুরা এবং হানাহানিতে আহত ও বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায়গুলির মানুষদের পাশে তিনি সব সময় থেকেছেন । তাঁর অমোঘ আহ্বান স্বেচ্ছাসেবীদের যেমন অনুপ্রাণিত করেছে , তেমনি অনেক মানুষ তার এই কাজে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ।

আধ্যাত্মিক গুরু হিসাবে শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর যোগ এবং ধ্যানের ঐতিহ্যকে পুনর্জাগ্রত করেছেন এবং একবিংশ শতাব্দীর পটভূমিকায় তাকে যুগোপযোগী করে স্থাপন করেছেন । আদি প্রজ্ঞাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর ব্যক্তি ও সমষ্টির উন্নয়নের জন্য নূতনতর পন্থার আবিষ্কার করেছেন ।এর মধ্যে আছে সুদর্শন ক্রিয়া যা অসংখ্য নরনারীকে দৈনন্দিন জীবনে এক আত্মশক্তি ও শান্তির ভান্ডার খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে। মাত্র ৩১ বছরের মধ্যে তাঁর কাজের প্রকল্প এবং উদ্যোগ ১৫২টি দেশের ৩৭ কোটির বেশি মানুষকে প্রভাবিত করেছে।

শান্তির প্রতীক

শান্তির দূতরূপে শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর অশান্তিকে দূর করার জন্য এক মুখ্য ভূমিকা পালন করে এসেছেন এবং সারা বিশ্বের কাছে অহিংসার বার্তা প্রচার করেছেন ।শান্তিকে একমাত্র লক্ষ্য করে নিরপেক্ষ পথিক হিসাবে আশার বাণী বহন করে তিনি যু্দ্ধবিদ্ধস্ত মানুষের কাছে পৌছে গিয়েছেন । ইরাক, আইভরিকোষ্ট, কাশ্মীর ও বিহারের বিবদমান পক্ষদের একসাথে আলোচনা বৈঠকে নিয়ে আসার বিশেষ কৃতিত্ব তাঁরই । এরই পাশাপাশি কৃষ্ণদেব রায়-এর রাজ্যাভিষেকের ৫০০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে অভ্যর্থনা কমিটির (কর্ণাটক সরকার আয়োজিত) চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁকে নিযুক্ত করা হয়েছে । জম্মু ও কাশ্মীর সরকার নিযুক্ত অমরনাথ শ্রাইন বোর্ডের অন্যতম সদস্য হিসাবেও শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর মনোনীত হয়েছেন ।

বিভিন্ন কর্মসূচী ও বক্তব্যের মধ্যদিয়ে শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর মানবিক মূল্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বারবার গুরুত্ব দিয়েছেন মানবজাতির মঙ্গলের জন্য । মানবতা আমাদের পরমতম সত্তা- একথা শ্রীশ্রীর উচ্চারণে বারবার স্বীকৃতি পেয়েছে । সর্বধর্মসমন্বয় এবং সর্বসংস্কৃতির মেলবন্ধনের সাহায্যেই মৌলবাদ-আক্রান্ত এই পৃথিবীতে চিরস্থায়ী শান্তি স্থাপিত হতে পারে- একথা তিনি বহুবার তা নিজের কথার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন ।

জাতি ধর্ম এবং দেশের সীমা ছাড়িয়ে তাঁর বাণী ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’ তাঁর কর্মের মাধ্যমে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের জীবনে ধ্বনিত হয়েছে । মানবিক মূল্যবোধের পুনর্জাগরণের দ্বারা, নিঃস্বার্থ সেবার দ্বারা নির্ভার নিঃশঙ্ক সমাজ গড়ে তোলা যায় এবং বাহ্যিক সুখের সাথে অন্তরের শান্তিও লাভ করা যায়-এই কথাই তাঁর মূল বক্তব্য ।

সমালোচনা

২০১২ সালে রবি শংকর জয়পুরের একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করার সময় , দাবি করেছিলেন যে ভারতের কিছু সরকারি স্কুল নকশালবাদের প্রজনন ক্ষেত্র , ভারতে জঙ্গি কমিউনিস্ট গোষ্ঠীগুলির আন্দোলনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। “সমস্ত সরকারি স্কুল ও কলেজ বেসরকারিকরণ করা উচিত। সরকারের কোনও স্কুল চালানো উচিত নয়। প্রায়ই দেখা যায় যে সরকারি স্কুলের ছেলেমেয়েরা নকশালবাদ ও সহিংসতায় পড়ে। বেসরকারি স্কুলের ছেলেমেয়েরা এতে প্রবেশ করে না,” । এর পরে তার এই মন্তব্যে মিডিয়া রিপোর্টে, শিক্ষাবিদ ও মন্ত্রীরা তার মন্তব্যকে “দুর্ভাগ্যজনক, অযৌক্তিক” বলে নিন্দা করেছেন এবং একে “বেসরকারীকরণের উদ্ভট যুক্তি” বলে অভিহিত করেছেন ।

এরপরেই তিনি তার টুইটার অ্যাকাউন্টে আরও স্পষ্টী করে জানান , “আমি বিশেষভাবে নকশাল প্রভাবিত অঞ্চলের অসুস্থ সরকারি স্কুলগুলির কথা উল্লেখ করেছি। যারা নকশালবাদের দিকে ঝুঁকছে তারা এই স্কুলগুলি থেকে এসেছেন। আমি বলিনি যে সমস্ত সরকারি স্কুল নকশালবাদের বংশবৃদ্ধি করে। মহান প্রতিভা এই স্কুলগুলি থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং আমি কখনই সাধারণীকরণ করব না।”

শ্রী শ্রী রবি শঙ্করের সংগঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো পরিবেশের যত্ন নেওয়া। ৩৬ টি দেশে ৭১ মিলিয়ন গাছ তার স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা রোপন করা হয়েছে এবং ৩৩ টি নদী এবং সেই সাথে হাজার হাজার জলাশয় ভারতে তার দ্বারা পুনরুজ্জীবিত  হচ্ছে | 

By Amit Kumar Basak

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী অমিত এখন বেসরকারী চাকুরীরত । পড়াশোনার পাশাপাশি লেখাটাও তার একটা নেশার মধ্যে পরে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *