Ugadi FestivalUgadi Festival

উগাদি উৎসব (Ugadi Festival) : ভারতবর্ষ বহু জাতি, বহু ধর্মের দেশ। সুদূর উত্তর থেকে দক্ষিণ– কত জাতি কত ভাষা, আবার তাঁদের নানা উৎসব। এমনই এক উৎসব হল উগাদি। দক্ষিণ ভারতের এক জনপ্রিয় উৎসব। যে কোনও উৎসবই হল আনন্দের, মজার। উগাদি উৎসবও তার ব্যতিক্রম নয়। কী এই উৎসব? কী এর তাৎপর্য? আসুন জেনে নিই।

উগাদি উৎসব হল দক্ষিণীদের নতুন বছরের সূচনার উৎসব। অর্থাৎ নববর্ষ। নতুন কিছুর শুরু সব সময়ই আমাদের আনন্দ দেয়। যা কিছু ছিল পুরানো, তাকে আবার নতুন করে ভাবার সুযোগ আসে। তাই সেটা যদি ‘উগাদি’ হয় তাহলে আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায়। পয়লা বৈশাখ, ফার্স্ট জানুয়ারির মতোই উগাদি হল দক্ষিণীদের নববর্ষ। উগাদি শব্দটি এসেছে যুগ মানে বছর এবং আদি মানে শুরু থেকে। অর্থাৎ বছরের শুরু।

বলা হয়, এই দিন থেকেই ভগবান ব্রহ্মা মহাবিশ্ব সৃষ্টি করা শুরু করেন। আর এই বিশ্বাস থেকেই উগাদি কথার উৎপত্তি ।

পৌরাণিক মতে আমাদের এক বছর সময় ভগবান ব্রহ্মার কাছে একদিনের সমান । তাই বলা হয় প্রত্যেক উগাদি র সময় ভগবান ব্রহ্মার দিনের সূচনা হয় । আবার বলা হয়, এই দিনই নাকি ভগবান বিষ্ণু পৃথিবীতে তাঁর প্রথম অবতার নেন– মৎস্য অবতার। এর পিছনে ও একটা পৌরাণিক কাহিনী আছে।

পুরান মতে , একবার সোমকাসুর নামের এক অসুর ভগবান ব্রহ্মার সমস্ত বেদ চুরি করে মহাসমুদ্রের তলায় লুকিয়ে ছিলো । তখন ভগবান বিষ্ণু একটা মাছের রূপ নিয়ে তাকে বধ করেন এবং ফিরিয়ে আনেন ভগবান ব্রহ্মার সমস্ত বেদ । বলা হয় এই ঘটনা ঘটেছিল চৈত্র মাসের প্রথম দিনে । বেদ ফিরে পাওয়া মাত্রই তিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টির কাজ শুরু করেন। আবার,ভগবান রামচন্দ্রের এইদিনেই হয় রাজ্যাভিষেক পাশাপাশি এই উৎসব কৃষকদের কাছেও বিশেষ সম্মানের। এই দিন তাঁরা নতুন ফসল বাড়ি নিয়ে আসে। আবার ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, সর্বপ্রথম এই উৎসব হয় পালিত হয় সাতবাহন রাজ গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর আমলে। আবার এই দিনই সম্রাট বিক্রমাদিত্য আক্রমণকারীদের পরাজিত করেছিলেন।

উগাদি উৎসবের গুরুত্ব

এই উৎসব দক্ষিণীদের কাছে আলাদাই গুরুত্ব বহন করে। একদিকে চৈত্রমাস। অন্যদিকে বসন্তের মতো ঋতু। নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দ। সবমিলিয়ে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এই সময় দক্ষিণ ভারতের সব মানুষ এক বিশেষ পানীয় পান করে। যার নাম পাচাদি। তেঁতুল, গুড়, আম, নিমফুল মিশিয়ে বানানো হয়। যা শরীরকে পরিবর্তিত আবহাওয়া থেকে যেমন বাঁচায়, তেমনই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তাই সবাই মিলে আনন্দের করে এই পানীয় পান করা হয়।

উৎসব মানেই ভুরিভোজ, উগাদিতেও তৈরি হয় হরেকরকম খাবার– ‘বোরেলু’ নামে পরোটা, ডাল, গমের আটা, হলুদ ও গুড় মিশিয়ে ভাজা হয়। এছাড়া, বোভাটটু বা পোলেলু, অথবা পুরান পোলি নামে বিশেষ খাবার তৈরি হয়।

Ugadi

পালনের আচার অনুষ্ঠান

পুজো মানেই পবিত্র। আর সেটা যদি হয় নববর্ষ তাহলে বাড়তি কিছু নিয়ম মেনে চলতেই হয়। মনে করা হয় এই দিন নিয়ম করে পুজো করলে স্বয়ং ভগবানের অশেষ কৃপা মেলে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে দৈনন্দিনের সমস্ত কাজকর্ম সেরে বেসন আর তেল মেখে স্নান সেরে নিতে হয়। তারপর নতুন কাপড় পরে পুজোয় বসতে হয়। সুগন্ধি ফুল, অক্ষত, ধূপ সহকারে পুজো করতে হবে ব্রহ্মার।

বর্তমানে অবশ্য আধুনিকতা মিশেছে এই উৎসবে। মানুষ আজ বড্ড বেশি ব্যস্ত। তাই আগের মতো উপভোগ করার সময় পায় না। তবে উৎসবের ওপর তার বিন্দুমাত্র রেশ পড়েনি। সব আধুনিকতাকে ছাপিয়ে ধরে রেখেছে তার পুরানো ঐতিহ্য। এই উৎসব দক্ষিণ ভারতীয়দের কাছে পবিত্র উৎসব। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব। আনন্দ, খাওয়া-দাওয়া, হইহুল্লোড়– সব মিলিয়ে জনপ্রিয় উৎসব হিসেবে সমাদৃত ভারতবাসীর কাছে।

পয়লা বৈশাখে যেমন নতুন কাজ শুরু করা হয়, তেমনই এই দিন দক্ষিণ ভারতের মানুষেরা নতুন কাজ শুরু করে। যেমন, বাড়ির জন্যে নতুন কিছু কেনা। নতুন গাড়ি কেনা বা বাড়ির ভিত পুজো সবটাই সেরে নেন এই পবিত্র দিনে। এই উৎসবের আছে একটি সুন্দর মানে। এই উৎসব আমাদের উপলব্ধি করায় কীভাবে অতীতের করা সব ভুল ভুলে যেতে হয়। জীবনকে কীভাবে ইতিবাচক ভাবে শুরু করা যায়। এগিয়ে যেতে হয় ভবিষ্যতের দিকে

By Amit Kumar Basak

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী অমিত এখন বেসরকারী চাকুরীরত । পড়াশোনার পাশাপাশি লেখাটাও তার একটা নেশার মধ্যে পরে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *