বিগত কয়েক বছর ধরে অসহ্য গরমের মধ্যেও গরিব মানুষদের আইসক্রিম খাওয়ার সুখ দিতে পেরেছে অরুণ আইসক্রিম। খুব কম দামে ভালো মানের আইসক্রিম বাজারে এনে । তবে এত শোরগোল ফেলে দেওয়া এই কোম্পানি কিন্তু নতুন নয় । কঠোর পরিশ্রম, বুদ্ধিমত্তা, আর উৎসাহের জোরে কীভাবে ২০ হাজার কোটি টাকার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, তা শিখতে গেলে জানতেই হবে অরুণ আইসক্রিমের প্রতিস্ঠাতা আর জি চন্দ্রমোগানের গল্প।
আর জি চন্দ্রমোগান তামিলনাড়ুর বিরুধনগর জেলার থিরুথাঙ্গালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা একটি ছোট মুদির দোকান চালাতেন। কিন্তু, এই দোকানটি থেকে যা রোজগার হত, তা তাঁর পড়াশোনার জন্য যথেষ্ট ছিল না। একটি সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করতেন, অঙ্ক ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়। কিন্তু, পরবর্তীতে লেখাপড়া ছেড়ে দেন তিনি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে, তিনি একটি কয়লা ডিপোতে কাজ শুরু করেন। সেই সময় মাসে ৬৫ টাকা বেতন পেতেন।
চাকরি পছন্দ না হওয়ায় এক বছর চাকরি ছেড়ে দেন। হাতে টাকা নেই , এমন অবস্থায় কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে দেন তিনি। এর থেকে পাওয়া ১৩,০০০ টাকা নিয়ে তিনি চেন্নাই চলে যান। সেখানে রায়পুরম এলাকায় একটি ছোট জায়গা ভাড়া নিয়ে আইস ক্যান্ডি তৈরি করতে শুরু করেন।
সেই সময় তার কর্মচারীরা আইসক্রিম তৈরী করতো এবং তিনি নিজে ঠেলাগাড়ি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় এই আইসক্রিম বিক্রি করতেন । শুনতে সহজ মনে হলেও ব্যাপারটা খুবই কঠিন ছিল । সেই সময় বাজারে ছেয়ে গেছিল দেশী বিদেশী বিভিন্ন নামী দামী কোম্পানির আইসক্রিম । সেসব ছেড়ে কেউ ই তার আইসক্রিম কিনতে চাইছিল না । এদের সাথে প্রতিযোগিতা করে বাজারে টিকে থাকাটাই দুষ্কর হয়ে গেছিল তখন । তাহলে বুঝতে ই পারছেন সেইসময় চন্দ্রমোহন বাবুকে কতটা কষ্ট করতে হয়েছিল । কিন্তু একটা কথা আছে , ” ইচ্ছে থাকলে উপায় হয় ” সেরকম ই একটা উপায় বের করলেন তিনি। সেই সময় বেশিরভাগ কলেজ পড়ুয়াদের হাতে খুব বেশি পয়সা থাকতো না। তাই তাদের কথা মাথায় রেখেই তিনি অনেক কম মূল্যের আইসক্রিম তৈরি করতে শুরু করলেন। আর এভাবেই অনেক নামী দামী কোম্পানিকে পিছনে ফেলে তিনি সাফল্যের মুখ দেখলেন । এরপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । প্রায় চার বছরের মধ্যে ই তার এলাকার বেশিরভাগ কলেজ ক্যান্টিনে তার আইসক্রিম ছেয়ে গেল।
এছাড়াও তিনি আরেকটা কৌশল অবলম্বন করেছিলেন । শহরের পাশাপাশি তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গ্ৰামগুলোতেও তিনি আইসক্রিম বিক্রি করা শুরু করেন । তার স্লোগান ছিল ” Fresh Icecream from Madras “। সেইসময় গ্ৰামের লোকজনের কাছে মাদ্রাসের মতো বড় শহরের খাবারের স্বাদ পাওয়া ই ছিল ভাগ্যের কথা । যদিও এর অনেক পরে ১৯৮০ সালের দিকে অরুন আইসক্রিম মাদ্রাসে পৌঁছায় ।
এভাবেই ধীরে ধীরে গ্ৰাম থেকে ছোট শহর, ছোট শহর থেকে বড় শহর এবং তারপর সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে চন্দ্রমোহন বাবুর ব্যাবসা।
চন্দ্রমোহন বাবু তার প্রোডাক্টের গুণগত মান ধরে রাখতে নিজেই ডেয়ারি ফার্ম খুলেছিলেন। এছাড়াও ভারতে প্রথম আইসক্রিম পার্লারের সূচনাও করেছিলেন তিনি ।
এর ই মধ্যে ১৯৯০ সালের দিকে হিন্দুস্থান ইউনিলিভার কোম্পানি ভারতের বেশ কিছু ছোটখাটো আইসক্রিম কোম্পানি কিনে নেয়। সেইসময় অনেক আর্থিক সমস্যা সত্ত্বেও চন্দ্রমোহন বাবু পরিস্থিতির কাছে নত হননি । বরং ব্যাবসা আরো বাড়াতে তিনি প্রচলন করেন রেফ্রিজারেটেট আইসক্রিম ভ্যানের।
আজকের দিনে অরুণ আইসক্রিম তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিজস্ব মিল্কব্যাঙ্ক তৈরি করেছে । তাদের আর বাজারের দুধের উপর নির্ভর করতে হয় না । আইসক্রিমের ব্যাবসাও বেড়েছে অনেক গুণ । ১৩০০০ টাকায় শুরু হওয়া কোম্পানির ব্যাবসা আজ কয়েক হাজার কোটি টাকা ।